চাঁদপুর ভ্রমণ গাইড
চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। মেঘনা নদীর তীরে এ জেলা অবস্থিত। চাঁদপুরের মানুষ আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত । মেঘনা, ডাকাতিয়া, ধনাগোদা নদীর কোল জুড়ে ১৭০৪.০৬ বর্গ কিমি আয়তনের ঘন সবুজ ভূখন্ডের নাম চাঁদপুর। ঐতিহাসিক জে. এম. সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর। অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। ১৯৮৪ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নৌ-পথে ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে সময় লাগে ৩/৪ ঘন্টা।
চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান
তিন গম্বুজ মসজিদ ও প্রাচীন কবর,
ভিঙ্গুলিয়া, হাইমচর, চাঁদপুর।
হাইমচরের ভিঙ্গুলিয়া গ্রামের মল্লিক বাড়িতে রয়েছে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ ও মসজিদের প্রাঙ্গণে রয়েছে কিছু বাঁধানো প্রাচীন কবর। জনশ্রম্নতি রয়েছে যে, এটি মলুলকজান বিবির মসজিদ। শিলালিপি থেকে যতদুর পাঠ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাতে জানা যায়, মসজিদটি ঈসা খাঁর আমলে জালালপুরের মল্লিক খেতাবপ্রাপ্ত কোনো শাসক নির্মাণ করেছিলেন। বাড়ির চতুপার্শ্বে পরীখা খনন করা আছে। লোকে বলে, মল্লিক বাড়ি, মল্লিক বাড়ি হচ্ছে ঈশা খাঁন আমলে প্রশাসকের পদবী। আরো জানা যায় যে, মেঘনায় বিলীন হওয়া হিঙ্গুলিয়া গ্রামেও অনুরূপ তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ ছিল। জেলা সদর থেকে বাস/সিএনজি/মোটর সাইকেল যোগে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে।
সাহেবগঞ্জ নীল কুঠি
সাহেবগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
জীর্ণ ও পুরাতন ভবনের ধ্বংসাবশেষ
ফরিদগঞ্জ উপজেলার এই ঐতিহাসিক গ্রামটিতে সাহেবগঞ্জ নীল কুঠিটির জীর্ণ ও পুরাতন ভবনের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। জানা যায় যে, সাহেবগঞ্জ ফিরিঙ্গী গোলন্দাজ বণিকেরা নীল চাষের খামার হিসেবে একটি ব্যবসা কেন্দ্র ও শহর গড়ে তুলেছিল। লোক মুখে জানা যায় যে, এটা একটি শিল্প ও বাণিজ্য এলাকা ছিল। গ্রামটির নকশা এবং রাসত্মা-ঘাট, জল নিস্কাশনের খাল, পাকা কালভার্ট, ১২টি স্থানের পুরাতন দালানকোঠার বিভিন্ন নমুনায় এটাই প্রতিয়মান হয়। এখানে নীল চাষ করতে অনিচ্ছুক চাষীদেরকে শাসিত্ম ও ভয় দেখাবার জন্য জেলহাজতও তৈরী করেছিল। তৎকালীন ফিরিঙ্গি বণিকেরা মধ্যপ্রাচ্য হতে কয়েক জন দর্জিকে এ এলাকায় নিয়ে এসে তাদেরকে দিয়ে বিশেষ ধরণের পোশাক তৈরী করত এবং তা বিভিন্ন রং এ রঞ্জিত করে বিদেশে চালান দিত। তখন হতে ঐসকল বিদেশী দর্জিরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরম্ন করে।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি/মোটর সাইকেল যোগে সাহেবগঞ্জ নীল কুঠি দেখতে যাওয়া যায়।
লোহাগড় মঠ
লোহাগড়, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
ডাকাতিয়া নদীর কুলে লোহাগড়া গ্রামে এই মঠটির ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান .
ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে লোহাগড়া গ্রামের মঠটি কিংবদন্তীর সাক্ষী হিসেবে এখনও দন্ডায়মান। পরম প্রতাপশালী জমিদার পরিবারের দুই ভাই লোহ ও গহড় এতই প্রতাপশালী ছিল যে, এরা যখন যা ইচ্ছা তাই করতেন। এই দুই ভাইয়ের নামানুসারে এই গ্রামের নাম লোহাগড় রাখা হয়। জনৈক ব্রিটিশ পরিব্রাজক লোহাগড় গ্রাম পরিদর্শনে গেলে তাদের ঐতিহ্য দেখে মুগ্ধ হন। কথিত আছে, ঐ পরিব্রাজক এর জন্য নদীর কুল হতে লোহ ও গড়ের বাড়ী পর্যমত্ম দুহাত প্রস্থ ও এক হাত উচ্চতার এবং প্রায় ২০০ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যে বিশিষ্ট সিকি আধুলী মুদ্রা দিয়ে একটি রাসত্মা নির্মাণ করেন। সাধারণ মানুষ ভয়ে এদের বাড়ীর সামনে দিয়ে চলাফেরা এড়িয়ে চলত। বাড়ীর সামনে দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে নৌকাগুলো নিঃশব্দে যাতায়াত করত। ডাকাতিয়া নদীর কূলে তাদের বাড়ীর অবস্থানের নির্দেশিকা স্বরূপ সুউচ্চ মঠটি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক প্রতিপত্তির নিদর্শণ স্বরূপ মঠের শিখরেও একটি স্বর্ণদন্ড স্থাপন করেন। এই স্বর্ণ দন্ডের লোভে মঠের শিখরে উঠার প্রচেষ্টায় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেও বলে জানা যায়। এই বৃহৎ স্বর্ণদন্ডটি পরবর্তীকালে ঝড়-তুফানে মঠ শিখর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে এবং নদী তটের জমিতে চাষ করার সময় একজন কৃষক এই স্বর্ণদন্ডটি পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। লোক মুখে শোনা যায় এই স্বর্ণদন্ডটি প্রায় আড়াই মন ওজনের ছিল। লোহাগড়ে এই দুই ভাইয়ের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। এখানে মাটির নীচে একটি গহবর রয়েছে বলে জনশ্রম্নতি আছে। মঠটি এখনও দাড়িয়ে আছে দুভাইয়ের দুর্দামত্ম প্রতাপের নীরব সাক্ষী হয়ে।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি/ মোটর সাইকেল যোগে লোহাগড় যাওয়া যায়।
রূপসা জমিদার বাড়ী
রূপসা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
পুরাতন জমিদার বাড়ী সংস্কার করে বর্তমানে বসবাস উপযোগী করা হয়েছে।
গ্রামের নাম রূপসা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুদীর্ঘ ঐতিহ্যই এ রূপের অহংকার। প্রায় দু’শতাব্দি আগের কথা, যখন এ অঞ্চলের বেশীরভাগ জনপদগুলোতে উন্নত সভ্যতার আলোর ছোঁয়া পায়নি । চাঁদপুর জেলার সুপ্রাচীন জনপদ ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রাম তখনও স্নিগ্ধতায় সমৃদ্ধ ছিল। সমৃদ্ধশালী এ গ্রামটির গৌরবময় ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে ঐ গ্রামেরই ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারের ইতিহাস। ঊনিশ শতকের প্রথমভাগে মোহাম্মদ গাজী এই জমিদার পরিবারের পত্তন করেন। প্রকৃত অর্থে মোহাম্মদ গাজীর সুযোগ্য পুত্র আহমেদ গাজী চৌধুরীর সময়কালেই এ জমিদার পরিবারের বিস্তৃতি ঘটে। সাধারণভাবে জমিদার বলতেই সাধারণ মানুষের মনে যে জমিদারের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে আহমেদ গাজী সে ধরনের জমিদার ছিলেন না । প্রজাহিতৈষী এ জমিদার তার কাজের মাধ্যমে নিজেকে একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। দয়া ও দানশীলতা ছিল তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি অনেকগুলো জমি ওয়াকফ করে যান। এখানে লাউতলীর দিঘীর ওয়াকফ উলেস্নখযোগ্য। শিক্ষানুরাগী এ জমিদার অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে রূপসা আহমদিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং রূপসা আহমদিয়া মাদ্রাসা উলেস্নখযোগ্য। তিনি ছিলেন খুবই ধর্মানুরাগী। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারকল্পে তিনি অকৃপণভাবে অনুদান প্রদান করতেন। রূপসার সুপ্রাচীন জামে মসজিদ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া তিনি আরো অনেক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি/ মোটর সাইকেলযোগে ফরিদগঞ্জ হয়ে রূপসা।
হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ
হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
বিরল কারম্নকার্য খচিত কর্মকুশলতার অনন্য নিদর্শণ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মসজিদগুলোর অন্যতম, জুমাতুল বিদার বৃহত্তম জামাতের মসজিদ হিসেবে খ্যাত হজীগঞ্জে এই ঐতিহাসিক জামে মসজিদটি অবস্থিত। বাংলা একাদশ শতকের কাছাকাছি সময়ে হযরত মকিম উদ্দিন (র.) নামে এক বুজুর্গ অলীয়ে কামেল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব ভূমি হতে স্ব-পরিবারে চাঁদপুরের বর্তমান হাজীগঞ্জ অঞ্চলে আসেন। পরবর্তীতে তারই বংশধর হাজী মুনিরম্নদ্দিন (মনাই গাজী) এর প্র-পৌত্র হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী (র.) হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদের জন্য জায়গা ওয়াকফ করে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বমোট ২৮,৪০৫ বর্গফুট আয়তনের এই বিশাল মসজিদটির রয়েছে ১৮৮ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। মিনারের চুড়ায় উঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। অসংখ্য ভক্ত মুসুলস্নী উক্ত মিনারের চুড়ায় আরোহন করে থাকেন। বর্তমানে মসজিদটিতে হাজার হাজার মুসুলস্নী তাদের প্রার্থণার কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকেন।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি যোগে চাঁদপুর-কুমিলস্না মহা-সড়কের পার্শ্বে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে যাওয়া যায়।
আলীগঞ্জ হযরত মাদ্দাখাঁ (র.) মসজিদ ও মাজার শরীফ
আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
মসজিদ, মাজার ও একটি ফোকানিয়া ও নুরানী মাদ্রাসা রয়েছে। মসজিদ সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত হযরত মাদ্দাখাঁ (র.) নামে এই মাজার। মোঘল আমলে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় যে ৩৬৫ জন আউলিয়া ইসলাম প্রচার করতে আসেন তাদের মধ্যে হযরত মাদ্দাখাঁ (র.) একজন। মধ্যপ্রাচ্যে ছিল তার আদি নিবাস। ১১৪৫ বঙ্গাব্দে সোনারগাঁ এর সরকার বর্তমান খাদেমগণের পুর্বপুরম্নষ কাজী করমুলস্নাহ সাহেবকে মাদ্দাখাঁ মসজিদ ও মাজার শরীফের ভূমিসহ অনেক সম্পত্তির ভোগদখলের অধিকার দিয়ে জমিদারী মালিকানা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৩২৫ বঙ্গাব্দে মসজিদ ও মাজারের নামে ৪৪.৬১ একর ভূমি ওয়াক্ফ করেন। এখানে প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষের দিকে বার্ষিক উরস শরীফ পালিত হয়ে থাকে। প্রতিদিন শত শত ভক্ত মাজার শরীফ জেয়ারত করতে আসে। বর্তমানে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে মসজিদ, মাজার ও একটি ফোরকানিয়ার মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি যোগে চাঁদপুর-কুমিলস্না মহা-সড়কের পার্শ্বে আলীগঞ্জ মাদ্দাখাঁ (র.) মসজিদ ও মাজার শরীফ যাওয়া যায়।
বলাখাল জমিদার বাড়ী
হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
বাড়ীটি সংস্কারবিহীন পরিত্যক্ত অবস্থায় বিদ্যামান
এই জমিদার বাড়িটি প্রায় ১০০ বছরের পুরাতন। সুরেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী ও দেবেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী তাদের পিতা – যোগেন্দ্র নারায়ন রায় চৌধুরী ছিলেন বলাখাল এস্টেটের জমিদার। তারা অত্যমত্ম দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। বর্তমান বলাখাল রেলস্টেশন ও বলাখাল জে এন উচ্চ বিদ্যালয় তাদের দানকৃত সম্পত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা যায়। ১২.৫২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই জমিদার বাড়িটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটি সংস্কার করে দর্শনীয় স্থানে পরিণত করা যেতে পারে।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি যোগে বলাখাল হয়ে সিএনজি/ মোটর সাইকেল/ রিক্সা যোগে বলাখাল জমিদার বাড়ী দেখতে যাওয়া যায়।
নাসিরকোর্ট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সমাধী স্থল
নাসিরকোর্ট, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
শ্বেত পাথরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম খচিত সমাধিস্থল।
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ৯ (নয়) জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৮১ সালে তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক জনাব হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে নাসিরকোর্ট শহীদ স্মৃতি কলেজের পার্শ্বস্থ এই সমাধিস্থলটি সংস্কার করা হয় এবং শ্বেত পাথরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামাংকিত করা হয়। জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি যোগে হাজীগঞ্জ হয়ে সিএনজি/ মোটর সাইকেল যোগে নাসিরকোর্ট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সমাধী স্থল যাওয়া যায়।
বড়কুল জমিদার বাড়ী (ভাগ্যিতা বাড়ি)
৬নং র্পুব বড়কুল হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
বাড়ীটি সংস্কারবিহীন পরিত্যক্ত অবস্থায় বিদ্যামান
বড়কুল জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হাজীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি জমিদার বাড়ি। যা স্থানীয়দের কাছে (ভাগ্যিতা বাড়ি) নামে পরিচিত। জমিদার বাড়িটি প্রায় চার একর জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। জমিদার বাড়িটি কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার পদ্মলোচন সাহা। তিনি ছিলেন খুবই শৌখিন। যা তার বাড়ির বিভিন্ন অংশে তাকালেই বুঝা যায়। কথিত আছে যে, পুকুরে গোসল করতে গেলে জমিদারের মায়ের পায়ে কাদা লাগবে বলে পুকুরের তলদেশে তিনি পাঁকা করেছিলেন। এইরকম আরো অনেক ধরনের সৌখিনতার চিহ্ন রয়েছে এই জমিদার বাড়িটিতে। এখনো এই জমিদার বাড়িতে জমিদার বংশের চতুর্থ প্রজন্মের লোকেরা বসবাস করতেছেন। তবে এখন আর তাদের সেই জমিদারি নেই। ভারতবর্ষ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাদের জমিদারিত্ত্ব শেষ হয়ে যায়। জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি যোগে হাজীগঞ্জ বাজারের (দ.) পাশে নদী পার হয়ে সিএনজি/ মোটর সাইকেল/ রিক্সা যোগে বড়কুল জমিদার বাড়ী দেখতে যাওয়া যায়।
শাহরাস্তি (র.) এর মাজার
নিজমেহার, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।
মাজারটি বর্তমানে একজন খাদেম দ্ধারা পরিচালিত।
হযরত শাহ্জালাল (রহ.)-এর একজন বিশিষ্ট সাথী মহান আধ্যাত্মিক সাধক হযরত রাস্তি শাহ (র.)-সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের আমলে কুমিল্লা এবং নোয়াখালী এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্যে এসে মেহার শ্রীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। ড. এনামুল হকের মতে, ১৩৫১ সালে মেহার অঞ্চলে এসেছিলেন আউলিয়া রাস্তি শাহ। শ্রীপুরেই বর্তমান কালীবাড়ির সন্নিকটে একটি আস্তানা নির্মাণ করে সাথীদের নিয়ে ধর্ম প্রচার করেন রাস্তি শাহ। তাঁর মৃত্যুর পর রাসিত্ম শাহ এর সমাধিস্থলটিই শাহরাস্তি (র.) মাজার নামকরণ হয়। মাজার সংলগ্ন ২৭ একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী রয়েছে। রাস্তিশাহের পূণ্য স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্যে তাঁর মৃত্যুর সাড়ে ৩শ’ বছর পরে শায়েস্তা খানের কন্যা বাংলার সুবেদার আজিমুশানের বিদূষী পত্নী পরিবিবির নির্দেশে এস্থানে ১৭০২ সালে একটি তিন গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন কাজী গোলাম রাজা।
জেলা সদর থেকে বাসযোগে শাহরাস্তি হয়ে সিএনজি/ মোটর সাইকেলযোগে শাহরাস্তি (র.) এর মাজার দেখতে যাওয়া যায়।
নাওড়া মঠ, (পঞ্চগ্রাম)
শাহরাস্তি, চাঁদপুর।
আনুমানিক ২০০ বৎসর আগে শৈলনাথ মজুমদার নামক জনৈক জমিদার তার পরলোকগত মায়ের সমাধির উপর আনুমানিক ১৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট নাওড়া (পঞ্চগ্রাম) মঠ নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। জেলা সদর থেকে বাসযোগে শাহরাস্তি হয়ে সিএনজি/ মোটর সাইকেলযোগে মেহের পঞ্চগ্রাম আজিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন দীঘির দক্ষিণ পাড়ে উক্ত মঠটি দেখতে যাওয়া যায়।
জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা
উজানী, কচুয়া, চাঁদপুর।
জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিষ্ঠাতা সুলতানুল আউলিয়া ক্বারী ইব্রাহিম সাহেব (র.) তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গহীর অন্যতম খলিফা। চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত কচুয়া থানার উত্তর-পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষে অবস্থিত উজানি গ্রামে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোক বিস্তৃত এক ঐতিহ্যবাহি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা থেকে কুমিল্লার মাধাইয়া নেমে সি এন জি করে উজানী মাদ্রাসায় যাওয়া সহজ।এছাড়াও গুলিস্তান সায়েদাবাদ থেকে অনির্বান বাসে করে উজানী মাদ্রাসা যাওয়া যায় আরও সহজ। চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর কচুয়া থানার সামনে থেকে সি এন জি করে উজানী মাদ্রাসায় যাওয়া সহজ। ১৯০১ সালে ভারত উপমহাদেশের কুরআন শিক্ষার প্রাণ পুরুষ অলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা ক্বারী ইব্রাহীম (র.) এর হাতে এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত, মাদরে ইলম দারুল উলুম দেওবন্দ এর অনুকরণে সম্পূর্ণ জনগণের সাহায্য ও সহযোগীতায় আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে প্রতিষ্ঠানটি যুগযুগ ধরে দ্বীনের খিদমত করে আসছে। একটি মজলিশে শূরা এবং একটি মজলিশে আমেলার মাধ্যমে মুহতামিম তথা প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে কার্য সম্পাদন হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর অধিনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নূরানী, নাযেরা, হিফজ ও কেরাত বিভাগসহ কিতাব বিভাগ (তাকমিল ফিল হাদিস) এবং ফতোয়া বিভাগ রয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানটি কেরাত বিভাগের জন্য সারাদেশে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছে।
সাচার শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির
সাচার, কচুয়া, চাঁদপুর।
৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট একতলা মন্দিরটির একটি কক্ষে দেব-দেবীর মূর্তি রাখা হয়েছে। অপর কক্ষে ঠাকুরের অবস্থান। বর্তমানে স্থানীয় হিন্দু জনসাধারণের আর্থিক সাহায্যে মন্দিরটিতে পূজা অর্চণা চলছে।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, মন্দিরটি ১২৭৭ বাংলা সনে শ্রী গংগা গোবিন্দ সেন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ দেবকে দর্শণের জন্য ভারতের শ্রীক্ষেত্রে যান। অনেক চেষ্টা করার পরও তিনি জগন্নাথ দেবকে দেখতে না পেয়ে মনের দুঃখে কান্নাকটি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন এবং স্বপ্নে তিনি স্বয়ং জগন্নাথদেব কর্তৃক এইরূপ আশ্বাস পান যে, দেবতা তার নিজ আবাসস্থল সাচারে আবির্ভূত হবেন। এরপর গংগা গোবিন্দ সেন নিজ বাড়িতে আসার কয়েকদিন পর তার বাড়ির পার্শ্বস্থ দীঘিতে অলৌকিকভাবে ভেসে আসা কিছু নিম কাঠ দেখতে পান। উক্ত কাঠ দিয়ে তিনি সাচার ঐতিহাসিক রথযাত্রা তৈরী করেন এবং উক্ত মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
জেলা সদর থেকে বাসযোগে কচুয়া এবং কচুয়া থেকে সিএনজি/অটোরিক্সা/মোটর সাইকেল যোগে সাচার শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির যাওযা যায়।
দোয়াটি মনসা মুড়া
দোয়াটি, কচুয়া, চাঁদপুর।
মাঠের মাঝে ১৩টি বাঁশঝাড় আছে এবং উক্ত ঝাড়ের চতুর্দিকে অনেক সাপের গর্ত রয়েছে।
কচুয়া উপজেলার ৪ নং সহদেবপুর ইউনিয়নের দোয়াটি গ্রামে মনসা মুড়া অবস্থিত। একদা এক ব্যক্তি মনসা বাঁশঝাঁড় থেকে বাঁশ কেটে নেয়ার পর বার বার স্বপ্নে দেখে যে, উক্ত বাঁশ ফেরৎ না দিলে তার বংশের কোন লোক বাঁচবে না। তারপর বাঁশ ফেরৎ না দেওয়ায় তার নাকে মুখে রক্ত বের হয়ে সে মারা যায়। পরে তার বংশধরগণ উক্ত বাঁশ ফেরৎ দিয়ে আসে। আরেকটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে মনসামুড়া থেকে সাপ ধরবার জন্য স্থানীয় কিছু লোকজন এক সাপুড়ে বহরের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। যখন সাপুড়ে তার বীণা বাজানো আরম্ভ করে তখন বাঁশের পাতায় পাতায় ছোট ছোট সাপ গর্ত থেকে উঠে আসে। সাপুড়ে একটি সাপ ধরে পাতিলে রাখার সময় উক্ত সাপের কামড়ে তার মৃত্যু ঘটে এবং অসংখ্য সাপ তার নৌকার দিকে যেতে আরম্ভ করলে সাপুড়ের দল সাপটি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে কোন সাপুড়েরা উক্ত স্থানে সাপ ধরতে আসেনা এবং কোনলোক বাঁশের একটি কঞ্চিও কাটেনা।
জেলা সদর থেকে বাসযোগে কচুয়া এবং কচুয়া থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা বা হুন্ডাযোগে দোয়াটি, মনসা মুড়া দেখতে যাওয়া যায়।
রহিমানগর সাহারপারের দিঘী
রহিমানগর, কচুয়া, চাঁদপুর।
কচুয়া উপজেলার রহিমানগর বাজার থেকে ৫০০ মিটার দূরে কচুয়া কালিয়াপাড়া সড়ক সংলগ্ন পূর্ব পাশে অবস্থিত ৬১ একর আয়তনের একটি দিঘী।
১৯৬৯ সালে দিঘীর উত্তর পাড়ে মাটি খনন করতে গিয়ে সাধু বাড়ির জনৈক জয়নাল মিয়া ১৫/১৬টি ৯/১০ ফুট দীর্ঘদেহী মানুষের মাথার খুলি দেখতে পান। উক্ত খুলিগুলো যথাস্থানে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। এছাড়া চতুর্পাড়ে বিভিন্ন সময় মাটি খনন করতে গিয়ে ১২/১৩ হাত লম্বা কয়েকটি খাঞ্জির চাকতি পাওয়া যায়। খাঞ্জিগুলো ছিল তোড়াযুক্ত মোটা বেতের। এ দিঘীর অংশে প্রত্নতাত্তিক অনুসন্ধান চালানো হলে অনেক অনুদঘাটিত তথ্যের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
জেলা সদর থেকে বাসযোগে কচুয়া এবং কচুয়া থেকে সিএনজি/অটোরিক্সা/ মোটর সাইকেলযোগে রহিমানগর সাহারপারের দিঘী দেখতে যাওয়া যায়।
উজানীতে বেহুলার পাটা
উজানী, কচুয়া, চাঁদপুর।
বেহুলা-লক্ষীন্দরের পাটা রক্ষণা বেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিলাটির একটি খন্ডাংশ বক্তারখাঁর শাহী মসজিদে পশ্চিম পাশে সম্পূর্ণ অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে আছে।
পদ্মপুরাণে বর্ণিত রয়েছে চাঁদ সওদাগরের পুত্রবধু বেহুলার পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুর জেলাধীন কচুয়া উপজেলার উজানী গ্রামে (তৎকালীণ উজানী নগরে)। উত্তরাংশে বেহুলার পৈত্রিক রাজবাড়ী অর্থাৎ বেহুলার পিতার নামানুসারে রাজবাড়ীটি নামকরণ করা হয়েছে। রাজবাড়ীর দক্ষিণাংশে রয়েছে বেহুলার দিঘীর নামে পরিচিত বেহুলার দিঘী। বেহুলার দিঘীর উত্তর পাড়ে রাজবাড়ী হতে প্রায় ৫০ মিঃ দক্ষিণে বেহুলার ছোটবেলার খেলনার সামগ্রী পুরানো পাথরের নির্মিত শিলা পাথরটি (আঞ্চলিক ভাষায় বেহুলার পাটা) আংশিক বিদ্যমান আছে। দৈর্ঘ্য ৩২ ইঞ্চি ও প্রস্থ ২৬ ইঞ্চি বিশিষ্ট এ শিলাটির ওজন প্রায় ২৫০ কেজি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ শিলাটি আদি অবস্থার আংশিক মাত্র। কয়েক বছর পূর্বে জনৈক ধোপা এই শিলায় খারাপ কাপড় ধোয়ার সময় শিলা পাটাটি বিকট শব্দে স্থানামত্মরিত হয়ে উজানী গ্রামের দুধখাঁর দিঘীতে পতিত হয়। শিলা পাটাটি পানির ওপর ভেসে উঠে বলে জনশ্রম্নতি আছে।
জেলা সদর থেকে বাসযোগে কচুয়া এবং কচুয়া থেকে সিএনজি/অটোরিক্সা/মোটর সাইকেল যোগে উজানীতে বেহুলার পাটা দেখতে যাওয়া যায়।
তুলাতলী মঠ
তুলাতলী, কচুয়া, চাঁদপুর।
সংস্কার বিহীন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে
কচুয়া উপজেলার ৯ নং কড়ইয়া ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামে অবস্থিত। এ মঠ প্রায় শত বছর পূর্বে স্থাপিত হয়ে যা আজও বিদ্যমান রয়েছে। জেলা সদর থেকে বাসযোগে কচুয়া এবং কচুয়া থেকে সিএনজি/অটোরিক্সা/মোটর সাইকেল যোগে তুলাতলী মঠ যাওয়া যায়।
নাগরাজাদের বাড়ি, মঠ ও দিঘী, কাশিমপুর
মতলব উত্তর, চাঁদপুর।
নাগরাজাদের বাড়িটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় বর্তমানে বিদ্যামান।
মতলবের কাশিমপুরে রয়েছে বিখ্যাত নাগরাজাদের বাড়ি ও ঐতিহাসিক মঠ। নাগরাজাদের বাড়িতে রয়েছে পাঁচশত বছরের প্রাচীন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদসমূহ। বোয়ালজুড়ি খালের দু’পাড়ে দুই রাজা। নাগরাজা (রামেশ্বরী দেবীর পিতা) ও দারাশাহের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের কাহিনী ও অমর প্রেমের গাঁথা এখনও লোকমুখে বিরাজিত। নায়ের গাঁয়ের কাচিয়ারা গ্রামে রয়েছে চল্লিশ একর আয়তনের কাঞ্চনমালার দিঘী।
জেলা সদর থেকে বাস/ সিএনজি যোগে মতলব উত্তর হয়ে সিএনজি/ মোটর সাইকেল যোগে নাগরাজদের বাড়ী যাওয়া যায়।